ফজরের নামাজ পড়ে কিছুক্ষন ঘরময় পায়চারি করলাম । মনটা বিষন্ন হয়ে আছে । আমেরিকায় যেভাবে পাল্লা দিয়ে করোনার বিস্তার বাড়ছে, খুব চিন্তা হচ্ছে । কেবল নিউইয়র্কে প্রায় ৪০ হাজার আক্রান্ত । মৃত্যুর সংখ্যা ৫০০ ছুইছুই !
আচ্ছা, শোয়েব কেমন আছে ? শোয়েব আমার বন্ধু । না না, বন্ধুর চেয়েও বেশি কিছু-আমার ভাই । তা নিউইয়র্কের ওজন পার্কে কেমন আছে আমার ভাইটি ?
হোয়াটসআপে গত দুদিন ধরে ট্রাই করে ওকে ধরতে পারিনি । কোনো কী ঝামেলায় আছে ? ম্যাসেজ পাঠিয়েছি, সিনও করেছে ! কোনো রিপ্লাই করেনি।
আমি মোবাইল নিয়ে ফের ফোন করি । রিং পড়ছে ।
-হ্যালো, শোয়েব ?
-দোস্ত কিতা খবর ??
-আমি বালা আছি, তোর কিতা খবর ??
কথা হয়, অনেকক্ষন কথা হয় । প্রায় আধঘন্টা হবে । মনে হলো শোয়েব খুব চিন্তিত । তবে ওর মানসিক দৃঢ়তা প্রচন্ড রকম । বিশ্বাসীদের সবচেয়ে বড় ইউএসপি এটা-ওরা খুব সহজে ভেঙে পড়েনা । কঠিন সময়েও মাথা ঠান্ডা রাখতে পারে । ওর নানা রকম বিশ্লেষণ শুনি । আমাকে বলে, দেখ কত শক্তিধর রাষ্ট্র, কত বড় সম্পদশালী ! অথচ করোনার কাছে কেমন অসহায় হয়ে গেছে । সে আমাকে সুরা আহজাব এর কয়েকটি লাইন পড়ে শোনায়-“তুমি বল, আল্লাহর হাত থেকে কে তোমাদের রক্ষা করতে পারে যদি তিনি তোমাদের কোন শাস্তি দিতে চান? অথবা তিনি যদি তোমাদের প্রতি কৃপা করতে চান তবে কে এ থেকে তোমাদের বঞ্চিত করতে পারে? আর তারা নিজেদের জন্য আল্লাহ ছাড়া অন্য কোন অভিভাবক বা কোন সাহায্যকারীও খুঁজে পাবে না’ (সুরা আহজাব: ১৭)।
শোয়েব বলে, পুরা নিউইয়র্কের হররোজের চিত্র কী করে আমুল বদলে দিয়েছে করোনা । বিশ্বের গেটওয়ে এখন অসহায় । ডাক্তার, নার্সরা দিশেহারা । মোড়ে মোড়ে হসপিটাল অথচ রোগী ধারনের জায়গা নেই । পর্যাপ্ত ভ্যান্টিলেটর নেই । পিপিই নেই ! সবচেয়ে ক্ষমতাধর দেশ । যখন তখন যাকে তাকে ধমকে বেড়ানো দেশ- করোনার কাছে কতটা নিরুপায় !
তবে পিপিই সংকটেও দারুণ সাহসিকতা এবং মানবিকতার দৃষ্টান্ত রাখছেন সে দেশের ডাক্তাররা । এমনকি অবসরে চলে যাওয়া প্রবীণ ডাক্তাররা যোগ দিয়েছেন এই জীবন রক্ষার সংগ্রামে । কেউ কেউ রোগীদের বাঁচাতে না পেরে কান্নায় ভেঙে পড়ছেন ।
এদিকে ইউএস সিনেট ২ ট্রিলিয়ন ডলার এইড ঘোষণা করেছে । শোয়েব জানায়, নিউইয়র্কের গভর্নর এনড্রিউ কোমো মার্চ থেকে জুন পর্যন্ত বাড়ী ভাড়া ফ্রিজ করেছেন ।
এতে ভাড়াটিয়ারা নিশ্চয়ই খুশি হয়েছেন । কিন্তু বাড়ীর মালিকদের কী অবস্থা ? যেখানে মালিকরা এই ভাড়ার টাকা দিয়ে ব্যাংকের মর্টগেজ এর কিস্তি পরিশোধ করেন ।
গভর্নর বলেছেন তাদেরকেও কিস্তি পরিশোধ করতে হবেনা । তাহলে ব্যাংক, ব্যাংকের কী হবে ?
ব্যাংকের দায়িত্ব রাষ্ট্র নিয়েছে ।
বাহ ! কি সুন্দর চেইন !
আমি ভাবি, আমাকেও ব্যাংকে কিস্তি পরিশোধ করতে হয় । একটা মাল্টিন্যাশনাল ব্যাংক থেকে হোম লোন নিয়েছিলাম ৯ বছর আগে । কখনো কিস্তি পরিশোধে বিলম্ব করিনি । তবু গত বৃহ:বার আমাকে ব্যাংক থেকে ফোন করে রিমাইন্ডার দেয়া হয়েছে যেন ১ তারিখে কিস্তির টাকাটা দিই ।
আমি তাদের আশ্বস্ত করেছি । বলেছি টাইমলি টাকা জমা হয়ে যাবে ।
তো শোয়েবের সাথে কথা বলে মনটা অনেকটা হাল্কা হয়েছে । সে এবং তার পরিবার সুস্থ আছে জেনে খুব স্বস্তি পেয়েছি । পৃথিবীতে আমাদের আত্নীয় স্বজন বন্ধুবান্ধবরা যে যেখানে আছে সুস্থ থাকুক । নিরাপদে থাকুক ।
-তানভীর শাহরিয়ার রিমন